১২২ টি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি Rabindranath Tagore Quotes in Bengali

Rabindranath Tagore Quotes in Bengali রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি

Rabindranath Tagore Quotes in Bengali

আজ আমরা বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ট সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উক্তি সম্পর্কে জানব। তিনি ছিলেন একাধারে একজন অগ্রগণ্য কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলে যাওয়া কথা গুলো আজও আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করে। তাই আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেরা উক্তি গুলোর মধ্যে ১২২ টি উক্তি বেছে নিয়েছি এবং সেগুলো সম্পর্কে জানব।

Rabindranath Tagore Quotes in Bengali


1. “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর আপন প্রাঙ্গণতলে দিবস শর্বরীব সুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি।”

2. “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।”

3. “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তবে ঘৃণা তারে যেস তৃণসম দহে।”

4. “যথার্থ অধিকার থেকে মানুষ নিজের দোষে ভ্রষ্ট হয়।”

5. “নিজের গুণহীনতার বিষয়ে অনভিজ্ঞ এমন নির্গুণ শতকরা নিরেনব্বই জন, কিন্তু নিজের গুণ একেবারে জানে না এমন গুণী কোথায়?”

6. “কাব্যরস আস্বাদনে পাঠকদের অত্যন্ত বেশি যত্নে পথ দেখিয়ে চলা স্বাস্থ্যকর নহে। নিজে নিজে সন্ধান করা ও আবিষ্কার করা সত্যকার আনন্দ।”

7. “সীমা আছে এ কথা যেমন নিশ্চিত, অসীম আছেন এ কথা তেমনি সত্য। আমরা উভয়কে যখন বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখি তখনি আমরা মায়ার ফাঁদে পড়ি। তখনি আমরা এমন একটা ভুল করিয়া বসি যে, আপনার সীমাকে লঙ্ঘন করিলেই বুঝি আমরা অসীমকে পাইব – যেন আত্মহত্যা করিলেই অমরজীবন পাওয়া যায়। যেন আমি না হইয়া আর-কিছু হইলেই আমি ধন্য হইব। কিন্তু, আমি হওয়াও যা আর-কিছু হওয়া যে তাহাই, সে কথা মনে থাকে না। আমার এই আমির মধ্যে যদি ব্যর্থতা থাকে তবে অন্য কোনো আমিত্ব লাভ করিয়া তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না। আমার ঘটের মধ্যে ছিদ্র থাকাতে যদি জল বাহির হইয়া যায়, তবে সে জলের দোষ নহে। দুধ ঢালিলেও সেই দশা হইবে, এবং মধু ঢালিলেও তথৈবচ।”

8. “বসন্তকালের ঝড়ে যখন রাশি রাশি আমের বোল ঝরিয়া পড়ে তখন সে বোলগুলি কেবলই মাটি হয়, তাহা হইতে গাছ বাহির হইবার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তেমনি দেখা গেছে, সংসারে উপদেশের বোল অজস্র বৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু অনেক স্থলেই তাহা হইতে অঙ্কুর বাহির হয় না, সমস্ত মাটি হইতে থাকে।”

9. “নবসৃষ্টির যত দোষ যত ত্রুটিই থাকুক-না কেন, মুক্তি কেবল ঐ কাঁটাপথেই। বাঁধা সড়ক গোলাপদলের পাপড়ি দিয়ে মোড়া হলেও সে পথ আমাদের পৌঁছিয়ে দেবে শেষটায় চোরা গলিতেই।”

10. “যখন তুমি সত্য কথা বলবার জন্য নিন্দা কর না, কেবল নিন্দা করবার জন্য সত্য কথা বল, তখন তোমার সে সত্য কথা নীতির বাজারে মিথ্যা কথার সমান দরেই প্রায় বিক্রি হবে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি

11. “যুক্তির একটা ব্যাকরণ আছে, অভিধান আছে, কিন্তু আমাদের রুচির অর্থাৎ সৌন্দর্যজ্ঞানের আজ পর্য্যন্ত একটা ব্যাকরণ তৈয়ারি হইল না। তাহার প্রধান কারণ, সে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে নির্ভয়ে বাস করিয়া থাকে – এবং সে দেশে “কেন” – আদালতের ওয়ারেন্ট জারি হইতে পারে না।”

12. “মানুষ যে কেবল নিজের মধ্যে আছে তা নয়, সকলে তাকে যা জানে সে জানার মধ্যেও সে অনেকখানি আছে। … তাই ‘আপনাকে জানো’ এই কথাটা শেষ কথা নয়, ‘আপনাকে জানাও’ এটাও খুব বড়ো কথা।”

13. “চিরকাল কোন্‌ জিনসটা থাকবে না – থাকবে তা কেউ বলতে পারে না এবং আমিও সে সমন্ধে কোনোরকম তর্কবিতর্ক করতে চাই নে – নিজের মনের ভিতরে যখন একটা সফলতার আনন্দ অনুভব করা যায় সেইটেই লেখকের পক্ষে যথার্ত অমরতা। দুর্ভাগ্যক্রমে সে আনন্দ খুব ভালো লেখক থেকে খুব খারাপ লেখক পর্যন্ত প্রায় সকলে ন্যূনধিক পরিমাণে অনুভব করে।”

14. “সামনে একটা পাথর পড়লে যে লোক ঘুরে না গিয়ে সেটা ডিঙ্গিয়ে পথ সংক্ষেপ করতে চায় – বিলম্ব তারই অদৃষ্টে আছে।”

15. “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।”

16. “আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না।”

17. “অপর ব্যাক্তির কোলে পিঠে চড়িয়া অগ্রসর হওয়ার কোন মাহাত্ম্য নাই – কারণ চলিবার শক্তিলাভই যথার্থ লাভ, অগ্রসর হওয়া মাত্র লাভ নহে।”

18. “নিজের অজ্ঞতা সম্বন্ধে অজ্ঞানতার মতো অজ্ঞান আর তো কিছু নাই।”

19. “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।”

20. “…যতটুকু অত্যাবশ্যক কেবল তাহারই মধ্যে কারারুদ্ধ হইয়া থাকা মানবজীবনের ধর্ম নহে। আমরা কিয়ৎপরিমাণে আবশ্যক-শৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া থাকি এবং কিয়ৎপরিমাণে স্বাধীন। আমাদের দেহ সাড়ে তিন হাতের মধ্যে বদ্ধ, কিন্তু তাই বলিয়া ঠিক সেই সাড়ে তিন হাত পরিমাণ গৃহ নির্মাণ করিলে চলে না, স্বাধীন চলাফেরার জন্য অনেকখানি স্থান রাখা আবশ্যক, নতুবা আমাদের স্বাস্থ্য এবং আনন্দের ব্যাঘাত হয়। শিক্ষা সম্বন্ধেও এই কথা খাটে। যতটুকু কেবলমাত্র শিক্ষা, অর্থাৎ অত্যাবশ্যক, তাহারই মধ্যে শিশুদিগকে একান্ত নিবদ্ধ রাখিলে কখনোই তাহাদের মন যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িতে পারে না। অত্যাবশক শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না মিশাইলে ছেলে ভালো করিয়া মানুষ হইতে পারে না – বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেকটা বালক থাকিয়াই যায়।…”

Rabindranath Tagore Quotes in Bengali with Images

21. ” সংগীত আর কিছু নয় – সর্বোৎকৃষ্ট উপায়ে কবিতা পাঠ করা।”

22. “আছে দু:খ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…”

23. “কেউ বা মরে কথা বলে, আবার কেউ বা মরে কথা না বলে।”

24. “আমরা যখন মিথ্যাপথে চলি, তখন আমরা দুর্বল হইয়া পড়ি এইজন্য। তখন আমরা আত্মহত্যা করি। তখন আমরা একেবারে আমাদের মূলে আঘাত করি। আমরা যাহার উপরে দাঁড়াইয়া আছি তাহাকেই সন্দেহ করিয়া বসি।”

25. “আমার মৃত্যুকালে তোমাকে যে কথাটা বলিব মনে করিয়াছিলাম, আজ তাহা বলিতে ইচ্ছা করিতেছে। আজ মনে হইতেছে, তুমি আমাকে যত শাস্তি দাও না কেন আমি বহন করিতে পারিব।”

26. “জ্ঞান পেলে নিজেকে জ্ঞানী বলে গর্ব হয় কিন্তু প্রেম পেলে নিজেকে অধম বলে জেনেও আনন্দ হয়।”

27. “প্রেমের দুই বিরুদ্ধ পার আছে। এক পারে চোরাবালি, আর-এক পারে ফসলের খেত। এক পারে ভালোলাগার দৌরাত্ম, অন্য পারে ভালোবাসার আমন্ত্রণ।”

28. “ভালোবাসার থার্মোমিটারে তিন মাত্রার উত্তাপ আছে। মানুষ যখন বলে ‘ভালোবাসি নে’ সেটা হল ৯৫ ডিগ্রি, যাকে বলে সাবনর্মাল। যখন বলে ‘ভালোবাসি’ সেটা হল নাইন্টিএইট পয়েন্ট ফোর, ডাক্তাররা তাকে বলে নর্মাল, তাতে একেবারে কোনো বিপদ নেই। কিন্তু প্রেমজ্বর যখন ১০৫ ছাড়িয়ে গেছে তখন রুগি আদর করে বলতে শুরু করেছে ‘পোড়ারমুখি’, তখন চন্দ্রবদনীটা একেবারে সাফ ছেড়ে দিয়েছে। যারা প্রবীণ ডাক্তার তারা বলে এইটেই হল মরণের লক্ষণ।”

29. “ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানেই যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি, নিজের ইচ্ছেকে অন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে যেখানে জুলুম, যেখানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলিয়ে অন্যকে সৃষ্টি করব।”

30. “বিবেচনা করবার বয়স ভালোবাসার বয়সের উলটো পিঠে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি, ছবি ও বাণী

31. “সত্যকার আদর্শ লোক সংসারে পাওয়া দুঃসাধ্য। ভালবাসার একটি মহান্‌ গুণ এই যে, সে প্রত্যেককে নিদেন এক জনের নিকটেও আদর্শ করিয়া তুলে।”

32. “আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়; একটি হচ্ছে জ্ঞান এবং অপরটি হচ্ছে প্রেম।”

33. “মন দিয়ে মন বোঝা যায়, গভীর বিশ্বাস শুধু নীরব প্রাণের কথা টেনে নিয়ে আসে।”

34. “আমার তৃষ্ণা তোমার সুধা তোমার তৃপ্তি আমার সুধা।”

35. “একটা মন আর একটা মনকে খুজিতেছে নিজের ভাবনার ভার নামাইয়া দিবার জন্য, নিজের মনের ভাবকে অণ্যের মনে ভাবিত করিবার জন্য।”

36. “চোখ কতটুকুই দেখে কান কতটুকুই শোনো স্পর্শ কতটুকুই বোধ করে। কিন্তু মন এই আপন ক্ষুদ্রতাকে কেবলই ছড়িয়ে যাচ্ছে।”

37. “দীর্ঘ আয়ু দীর্ঘ অভিশাপ বিচ্ছেদের তাপ নাশে সেই বড়ো তাপ।”

38. “প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন।”

39. “ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার চেয়ে আরো বেশি জ্যান্ত।”

40. “ক্ষুদ্রকে লইয়াই বৃহৎ, সীমাকে লইয়াই অসীম, প্রেমকে লইয়াই মুক্তি। প্রেমের আলো যখনই পাই তখনই যেখানে চোখ মেলি সেখানেই দেখি, সীমার মধ্যে সীমা নাই।”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী

41. “এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।”

42. “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি জানো? নাহ, জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, উত্তরটা সঠিক নয়। সবচেয়ে বড় দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”

43. “মনে যখন একটা প্রবল আনন্দ একটা বৃহৎ প্রেমের সঞ্চার হয় তখন মানুষ মনে করে, ‘আমি সব পারি’। তখন হঠাৎ আত্মবিসর্জনের ইচ্ছা বলবতী হইয়া ওঠে।”

44. “তুমি যদি না দেখা দাও, কর আমায় হেলা, কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল-বেলা।”

45. “প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”

46. “প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না।”

47. “রমণীর মন সহস্রবর্ষেরই, সখা, সাধনার ধন।”

48. “নারীর প্রেম পুরুষকে পূর্ণশক্তিতে জাগ্রত করতে পারে; কিন্তু সে প্রেম যদি শুক্লপক্ষের না হয়ে কৃষ্ণপক্ষের হয় তবে তার মালিন্যের আর তুলনা নেই।”

49. “স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়। নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হবার বিষয়টা কেন যেন তারা ভাবতেই চায় না।”

50. “পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথম যৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।”

51. “পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো; শান বেশি না দিলেও কেবল ভারেই অনেক কাজ করতে পারে। মেয়েদের বুদ্ধি কলম – কাটা ছুরির মতো; যতই ধার দাওনা কেনো, তাতে বৃহৎ কাজ চলে না।”

52. “নারী দাসী বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে নারী রাণীও বটে।”

53. “যে পুরুষ অসংশয়ে অকুন্ঠিতভাবে নিজেকে প্রচার করিতে পারে সেই সমর্থ পুরুষ সহজেই নারীর দৃষ্টি আর্কষণ করিতে পারে।”

54. “নরমাংসের স্বাদ পাইলে মানুষের সম্বন্ধে বাঘের যে দশা হয়, স্ত্রীর সম্বন্ধে তাহার ভাবটা সেইরূপ হইয়া উঠে।”

55. “সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম, সে কখনো করে না বঞ্চনা।”

56. “যা সত্য তার জিওগ্রাফি নাই।”

57. “সমস্ত পৃথিবী বলছে আমি গোলাকার, কিন্তু আমার পায়ের তলার মাটি বলছে আমি সমতল। পায়ের তলার মাটির জোর বেশি, কেননা সে যেটুকু বলে সে একেবারে তন্ন তন্ন করে বলে। পায়ের তলার মাটির কাছ থেকে পাই তথ্য, অর্থাৎ কেবল তথাকার খবর, বিশ্বপৃথিবীর কাছ থেকে পাই সত্য, অর্থাৎ সমস্তটার খবর।”

58. “সংসারে প্রতিদিন আমরা যে সত্যকে স্বার্থের বিক্ষিপ্ততায় ভুলিয়া থাকি উৎসবের বিশেষ দিনে সেই অখণ্ড সত্যকে স্বীকার করিবার দিন – এইজন্য উৎসবের মধ্যে মিলন চাই। একলার উৎসব হইলে চলে না।”

59. “পাপকে ঠেকাবার জন্য কিছু না করাই তো পাপ।”

60. “আমরা কথার অধীন, প্রধার অধীন অসংখ্য প্রবৃত্তির অধীন।”

61. “হায় বুদ্ধিহীন মানবহৃদয়; ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচে না, যুক্তিশাস্ত্রের বিধান বহুবিলম্বে মাথায় প্রবেশ করে, প্রবল প্রমাণকেও অবিশ্বাস করিয়া মিথ্যা আশাকে দুই বাহুপাশে বাঁধিয়া বুকের ভিতরে প্রাণপণে জড়াইয়া ধরা যায় অবশেষে একদিন সমস্ত নাড়ী কাটিয়া হৃদয়ের রক্ত শুষিয়া সে পলায়ন করে, তখন চেতনা হয় এবং দ্বিতীয় ভ্রান্তিপাশে পড়িবার জন্য চিত্ত ব্যাকুল হইয়া উঠে।”

62. “নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।”

63. “অপরিচয় হইতে পরিচয়ের পথ অতি দীর্ঘ।”

64. “অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না।”

65. “কত বড়ো আমি’ কহে নকল হীরাটি। তাই তো সন্দেহ করি নহ ঠিক খাঁটি।”

66. “গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ।”

67. “আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।”

68. “লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।”

69. “রমণী অনর্থক হাসে, তাহা দেখিয়া অনেক পুরুষ অনর্থক কাঁদে, অনেক পুরুষ ছন্দ মিলাইতে বসে, অনেক পুরুষ গলায় দড়ি দিয়ে মরে।”

70. “সংসারের কোন কাজেই যে হতভাগ্যের বুদ্ধি খেলে না, সে নিশ্চয়ই ভাল বই লিখিবে।”

71. “বিয়ে করলে মানুষকে মেনে নিতে হয়, তখন আর গড়ে নেবার ফাঁক পাওয়া যায় না।”

72. “সোহাগের সঙ্গে রাগ না মিশিলে ভালবাসার স্বাদ থাকে না – তরকারীতে লঙ্কামরিচের মত।”

73. “সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে; সে নিতান্ত নিরীহ।”

74. “মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে। মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিৎ উপরে আছে, সেইজন্যই তাড়া।”

75. “সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।”

76. “যখন দেশকে মা বলে আমরা গলা ছেড়ে ডাকি তখন মুখে যাই বলি মনে মনে জানি, সে মা গুটিকয়েক আদুরে ছেলের মা …”

77. “শিমুল কাঠই হোক আর বকুল কাঠই হোক, আগুনের চেহারাটা একই।”

78. “প্রতি মানুষের জীবনের সমস্ত কাজ তুমি রাশীকৃত করে পরীক্ষা করে দেখো, দেখবে, যে খনিতে জন্মেছে তার গায়ে তার মাটি লেগে থাকবেই থাকবে।”

79. “ফাগুনের নবীন আনন্দে গানখানি গাঁথিলাম ছন্দে; দিল তারে বনবীথি কোকিলের কলগীতি, ভরি দিল বকুলের গন্ধে।”

80. “আমাদের চন্দ্রের যা কলঙ্ক সেটা কেবল মুখের উপরে, তার জ্যোৎস্নায় কোনো দাগ পড়ে না।”

81. “প্রথমে যেটি একটি উদ্দেশ্যের উপায় মাত্র থাকে, মানুষে ক্রমে সেই উপায়টিকে উদ্দেশ্য করিয়া তুলে। যেমন টাকা নানাপ্রকার সুখ পাইবার উপায় মাত্র, কিন্তু অনেকে সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়া টাকা পাইতে চান।”

82. “মহাপুরুষেরা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করিয়া যান আর আমরা তাহার মধ্য হইতে সম্প্রদায়টাই লই, ধর্মটা লই না।”

83. “কাহারও হাসি ছুরির মতো কাটে, কাহারও হাসি অশ্রুজলের মতো।”

84. “পৃথিবীতে সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই তাহা বিনামূল্যেই পাইয়া থাকি, তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না। মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত বড়ো তাহা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতেই পারি না।”

85. “আমার এই আমির মধ্যে যদি ব্যর্থতা থাকে তবে অন্য কোনো আমিত্ব লাভ করিয়া তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না।”

86. “যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে আনুষ্ঠানিক ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে।”

87. “আমাদের আত্মার মধ্যে অখণ্ড ঐক্যের আদর্শ আছে। আমরা যা কিছু জানি কোনো না কোনো ঐক্যসূত্রে জানি। কোনো জানা আপনাতেই একান্ত স্বতন্ত্র নয়। যেখানে দেখি আমাদের পাওয়া বা জানার অস্পষ্টতা সেখানে জানি,মিলিয়ে জানতে না পারাই তার কারণ।”

88. “বাঙালির বুদ্ধি সহজেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তাহার দ্বারা চুল চেরা যায়, কিন্তু বড়ো বড়ো গ্রন্থে ছেদন করা যায় না। তাহা সুনিপুণ, কিন্তু সবল নহে। আমাদের বুদ্ধি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মতো অতিসূক্ষ্ম তর্কের বাহাদুরিতে ছোটে ভালো, কিন্তু কর্মের পথে গাড়ি লইয়া চলে না।”

89. “মানুষের মধ্যে দ্বিজত্ব আছে; মানুষ একবার জন্মায় গর্ভের মধ্যে, আবার জন্মায় মুক্ত পৃথিবীতে। …মানুষের এক জন্ম আপনাকে নিয়ে, আর-এক জন্ম সকলকে নিয়ে।”

90. “ভুল করিবার অধিকার যাহার নাই, সত্যকে আবিষ্কার করিবার অধিকারও সে পায় নাই। পরের শত শত ভুল জড়ভাবে মুখস্থ করিয়া রাখার চেয়ে সচেষ্টভাবে নিজে ভুল করা অনেক ভালো। কারণ, যে চেষ্টা ভুল করায় সেই চেষ্টাই ভুলকে লঙ্ঘন করাইয়া লইয়া যায়।”

91. “আমাদের হৃদয়-গত সত্য-সকল “কেন”-কে বড়ো একটা কেয়ার করে না। যুক্তির একটা ব্যাকরণ আছে, অভিধান আছে, কিন্তু আমাদের রুচির অর্থাৎ সৌন্দর্যজ্ঞানের আজ পর্য্যন্ত একটা ব্যাকরণ তৈয়ারি হইল না। তাহার প্রধান কারণ, সে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে নির্ভয়ে বাস করিয়া থাকে – এবং সে দেশে “কেন” – আদালতের ওয়ারেন্ট জারি হইতে পারে না।”

92. “প্রত্যেক মানুষেই আছে একজন আমি, সেই অপরিময় রহস্যের অসীম মূল্য জোগায় ভালোবাসায়। অহংকারের মেকি পয়সা তুচ্ছ হয়ে যায় এর কাছে। … সাধারণকেই অসাধারণ করে আবিষ্কার করে ভালোবাসা। শাস্ত্রে বলে, আপনাকে জানো। আনন্দে আপনাকেই জানি আর-একজন যখন প্রেমে জেনেছে আমার আপনকে।”

93. “ফাঁকি তো বরাবর চলে না। দাম দিতেই হবে। নইলে বিধাতা সহ্য করেন না – দীর্ঘকাল ধরে প্রতিদিন সৌভাগ্যের ঋণ শোধ করতে হয়, তবেই স্বত্ব ধ্রুব হয়ে ওঠে।”

94. “বিনয় একটা অভাবাত্মক গুণ। আমার যে অহংকারের বিষয় আছে এইটে না মনে থাকাই বিনয়, আমাকে যে বিনয় প্রকাশ করিতে হইবে এইটে মনে থাকার নাম বিনয় নহে।”

95. “বাঙালির বুদ্ধি সহজেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তাহার দ্বারা চুল চেরা যায়, কিন্তু বড়ো বড়ো গ্রন্থে ছেদন করা যায় না। তাহা সুনিপুণ, কিন্তু সবল নহে। আমাদের বুদ্ধি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মতো অতিসূক্ষ্ম তর্কের বাহাদুরিতে ছোটে ভালো, কিন্তু কর্মের পথে গাড়ি লইয়া চলে না।”

96. “আমার না হলেও চলত, কেবল আমি ইচ্ছা করে করছি এই যে মুক্ত কর্তৃত্বের ও মুক্ত ভোক্তৃত্বের অভিমান, যে অভিমান বিশ্বস্রষ্টার এবং বিশ্বরাজ্যেশ্বরের, সেই অভিমানই মানুষের সাহিত্যে এবং আর্টে। এই রাজ্যটি মুক্ত মানুষের রাজ্য, এখানে জীবনযাত্রার দায়িত্ব নেই।”

97. “লোকের যখন ধর্মজ্ঞান সহসা বিশেষ প্রবল হইয়া উঠে, তখন কোন যুক্তিই তাহার কাছে খাটে না।”

98. “অহংটাই পৃথিবীর মধ্যে সকলের চেয়ে বড়ো চোর। সে স্বয়ং ভগবানের সামগ্রীও নিজের বলিয়া দাবি করিতে কুণ্ঠিত হয় না।”

99. “মানুষ শুধু প্রাণবান জীব নয়, মানুষ মনোবান – এ কথাটি মনে রাখা চাই।”

100. “ঘটিবাটি প্রভৃতি দরকারি জিনিসকেও মানুষ সুন্দর করে গড়ে তুলতে চায়; কারণ ঘটিবাটির উপযোগিতা মানুষের প্রয়োজনের পরিচয় মাত্র। কিন্তু তার সৌন্দর্যে মানুষের নিজেরই রুচির, নিজেরই আনন্দের পরিচয়। ঘটিবাটির উপযোগিতা বলছে, মানুষের দায় আছে; ঘটিবাটির সৌন্দর্য বলছে, মানুষের আত্মা আছে।”

101. “ফ্যাশানটা হল মুখোশ, স্টাইলটা হল মুখশ্রী।”

102. “আত্মপর ধনিদরিদ্র পণ্ডিতমূর্খ এই জগতে একই প্রেমের দ্বারা বিধৃত হইয়া আছে, ইহাই পরম সত্য—এই সত্যেরই প্রকৃত উপলব্ধি পরমানন্দ। উৎসবদিনের অবারিত মিলন এই উপলব্ধিরই অবসর। যে ব্যক্তি এই উপলব্ধি হইতে একেবারেই বঞ্চিত হইল, সে ব্যক্তি উন্মুক্ত উৎসবসম্পদের মাঝখানে আসিয়াও দীনভাবে রিক্তহস্তে ফিরিয়া চলিয়া গেল।”

103. “পৃথিবীতে অনেক মহামূল্য উপহার আছে, তার মধ্যে সামান্য চিঠিখানি কম জিনিষ নয়। চিঠির দ্বারা পৃথিবীতে একটা নুতন আনন্দের সৃষ্টি হয়েছে। আমার মনে হয়, যারা চিরকাল অবিচ্ছদে চব্বিশ ঘন্টা কাছাকাছি আছে, যাদের মধ্যে চিঠি লেখালেখির অবসর ঘটেনি, তারা পরস্পরকে অসম্পূর্ণ করেই জানে।”

104. “মানুষের প্রাণে বিষ মিশায়েছে মানুষ আপন হাতে, ঘটেছে তা বারে বারে।”

105. “মানুষ এক দিকে মৃত্যুর অধিকারে, আর-এক দিকে অমৃতে; এক দিকে সে ব্যক্তিগত সীমায়, আর-এক দিকে বিশ্বগত বিরাটে। এই দুয়ের কোনোটাকেই উপেক্ষা করা চলে না।”

106. “অন্য ক্ষমতা যখন কম থাকে তখন খোঁচা দিবার ক্ষমতাটা খুব তীক্ষ্ম হইয়া উঠে।”

107. “নিজের কাছে নিজের শোকের একটি অভিমান আছে। এত তীব্র বেদনাও যে কোনো চিরসত্যকে বহন করে না সে কথাটাকে আমরা সান্ত্বনাস্বরূপে গ্রহণ করি নে, তাতে আমাদের দুঃখের অহংকারে আঘাত লাগে।”

108. “ধর্ম যারা সম্পূর্ণ উপলব্ধি না করিয়া প্রচার করিতে চেষ্টা করে তহারা ক্রমশই ধর্মকে জীবন হইতে দূরে ঠেলিয়া থাকে। ইহারা ধর্মকে বিশেষ গন্ডি আঁকিয়া একটা বিশেষ সীমানার মধ্যে আবদ্ধ করে।”

109. “ভয়ের তাড়া খেলেই ধর্মের মূঢ়তার পিছনে মানুষ লুকাতে চেষ্টা করে।”

110. “ছোট ছোট মুখ জানে না ধরার দুখ, হেসে আসে তোমাদের দ্বারে। নবীণ নয়ন তুলি কৌতুকেতে দুলি দুলি চেয়ে চেয়ে দেখে চারিধারে।”

111. “যৌবনের শেষে শুভ্র শৎরকালের ন্যায় একটি গভীর প্রশান্ত প্রগাঢ় সুন্দর বয়স আসে যখন জীবনের শেষে ফল ফলিবার এবং শস্য পাকিবার সময়।”

112. “সময়ের সমুদ্রে আছি কিন্তু এক মুহুর্তে সময় নেই।”

113. “যৌবনই ভোগের কাল বার্ধক্য স্মৃতিচারণের।”

114. “যে খ্যাতির সম্বল অল্প তার সমারোহ যতই বেশি হয়, ততই তার দেউলে হওয়া দ্রুত ঘটে।”

115. “কি পাইনি তারই হিসাব মেলাতে মন মোর নহে রাজি।”

116. “সংসারে সাধু-অসাধুর মধ্যে প্রভেদ এই যে, সাধুরা কপট আর অসাধুরা অকপট।”

117. “ক্ষমাই যদি করতে না পারো, তবে তাকে ভালোবাসো কেন?”

118. “হঠাৎ একদিন পূর্ণিমার রাত্রে জীবনে যখন জোয়ার আসে, তখন যে একটা বৃহৎ প্রতিজ্ঞা করিয়া বসে জীবনের সুদীর্ঘ ভাটার সময় সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে তাহার সমস্ত প্রাণে টানে পড়ে।”

119. “যায় যদি লুপ্ত হয়ে থাকে শুধু থাক এক বিন্দু নয়নের জল কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল এ তাজমহল।”

120. “মানুষ পণ করে পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য।”

121. “অক্ষমের লোভ আলাদিনের প্রদিপের গুজব শুনলেই লাফিয়া উঠে।”

122. “নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।”

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url